07/06/2025
সময়ের সীমানা: অধ্যায় ১ একটি পরীক্ষার ভুল
সময় ভ্রমণ কাহিনি

সময়ের সীমানা: অধ্যায় ১ একটি পরীক্ষার ভুল

May 21, 2025

গল্পের নাম : সময়ের সীমানা
এপিসোড : একটি পরীক্ষার ভুল
ধরন : বাংলা সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার ।

অধ্যায় ১: গবেষণাগারে একা

ঢাকার উপকণ্ঠে একটি নির্জন জায়গায় গড়ে ওঠা গবেষণা কেন্দ্রটি বাইরে থেকে দেখতে তেমন কিছু নয়—দোতলা একটি ভবন, চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া, আর এক গেটের ভেতর প্রতিদিন ঢোকে একজন মানুষ। তার নাম ড. ফারহান হোসেন, বয়স চল্লিশ ছুঁইছুঁই, পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি, সময় ও মহাকর্ষ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণায় নিমগ্ন।

তিনি একা থাকেন, একা কাজ করেন। তার বন্ধুবান্ধব নেই, পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন। তার মনে শুধু একটাই লক্ষ্য—সময়ের গঠন ও তার ব্যবস্থাপনাকে বুঝে ফেলা।

সময় নিয়ে পাগলামো?

“তুমি পাগল?” একদিন ফোনে একজন পুরোনো সহকর্মী বলেছিল।
“সময় ট্রাভেল কি তোমার টাইম মেশিন বানানোর মতো সহজ কিছু মনে হয়?”

ফারহান শুধু হেসেছিলেন। কারণ সে জানে, সে যা করছে তা শুধু কাল্পনিক নয়, বাস্তবতার কণ্ঠস্বর। তার হাতে তৈরি যন্ত্রটির নাম—ChronoShift. এটি একটি কোয়ান্টাম সময়চক্র, যা গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ ও কোয়ান্টাম টানেলের সাহায্যে এক ব্যক্তি বা বস্তুকে সময়ের ভিন্ন বিন্দুতে স্থানান্তর করতে পারে—তত্ত্ব অনুযায়ী।

আজকের দিনটা বিশেষ, কারণ আজ ছিল তার প্রথম মানুষের উপর পরীক্ষার দিন। এবং সেই “মানুষ” হচ্ছেন তিনি নিজেই।

অধ্যায় ২: ChronoShift চালু হয়

গভীর রাত, জানালার বাইরে হালকা বৃষ্টি। ল্যাবের ভিতরে শুধু একটাই আলো জ্বলছে—ফারহানের ডেস্কের উপরে। তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সার্কিট বোর্ড, ল্যাপটপ, পাসকোড লকড ট্রান্সমিশন কেস, আর মাঝখানে রাখা তার স্বপ্নের ফল—ChronoShift যন্ত্র।

পরীক্ষার মুহূর্ত

তিনি মেশিনের কাচঘেরা চেম্বারে ঢুকে হালকা গ্যাসের আওয়াজের মধ্যে বসে পড়লেন।
ল্যাপটপ থেকে টাইম কো-অর্ডিনেট ইনপুট করলেন:
তারিখ: ২১ মে ২০২5, সময়: রাত ১১:৩০
গন্তব্য: ৬০ সেকেন্ড ভবিষ্যত।

“শুধু এক মিনিট সামনের দিকে গিয়ে ফিরে আসবো। এটা নিছক একটি ঝুঁকিমুক্ত পরীক্ষা।” তিনি নিজেকেই বললেন।

কিন্তু তিনি জানতেন না, ChronoShift এ প্রবেশের আগের মুহূর্তে সিস্টেমে একটি কোয়ান্টাম টানেলের ডেটা কনফ্লিক্ট ঘটেছে, যা ইনপুট কো-অর্ডিনেটকে বিপরীত দিকে ঠেলে দিয়েছে।

অধ্যায় ৩: যখন সময় বদলে যায়

মেশিন চালু হলো। চারদিকে আলো ঝলসে উঠল, চেম্বারের কাচ কাঁপতে লাগল, এবং হঠাৎ একটি গভীর শব্দের সঙ্গে সব নিঃশব্দ হয়ে গেল।

চোখ খুললেন এক অজানা জগতে

ফারহান যখন চোখ খুললেন, তখন চারপাশে মাটির গন্ধ। দূরে কোথাও গুলি চলার শব্দ। আকাশে নেই বিদ্যুৎ লাইন, নেই মোবাইল টাওয়ার, নেই কোনো আধুনিক স্থাপনা।

তিনি উঠে দাঁড়ালেন। চারপাশে ধোঁয়া, পোড়া গাছ, আর ছিন্নভিন্ন কিছু তাঁবু। তার পোশাক ভিজে আছে কাদায়। তিনি একটি যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে।

তার ChronoShift এখনও গলায় ঝুলে আছে, কিন্তু স্ক্রিনে লেখা:
ERROR 403: Temporal Displacement Beyond Safe Limits
Estimated Year: 1925 (±3)

অধ্যায় ৪: এখন কী হবে?

ফারহানের বুকের মধ্যে চাপ ধরে আসলো। এই যুগে কোনো GPS নেই, কোনো কম্পিউটার নেই, এমনকি ভাষার ব্যবহারে সামান্য পার্থক্যও অনুভব করলেন। তিনি হেঁটে যেতে লাগলেন, অচেনা সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে।

এক রাইফেলধারীর মুখোমুখি

হঠাৎ সামনে দাঁড়াল এক তরুণ, হাতে ব্রিটিশ রাইফেল।
“তুমি কে? এখানকার লোক নও।”
তার চোখে ভয়, মুখে ঘাম।

ফারহান কিছু বলার আগেই এক দল লোক ছুটে এলো, কেউ বলল—
“একে নিয়ে চলো, সন্দেহজনক।”
তার টাইম মেশিন আর কোনো কাজে লাগছে না। তাকে এখন সময়ের নয়, মানুষের বিচার পাশ করতে হবে।

অধ্যায় ৫: পরবর্তী যাত্রার শুরু

এই ছিল ফারহানের টাইম ট্রাভেলের শুরু। ভুল এক ক্যালকুলেশন তাকে ১০০ বছর পেছনে নিয়ে ফেলেছে। এখন তাকে শুধু টিকে থাকতে হবে না, একটি ভুলকে সংশোধন করে আবার ফিরে আসতে হবে নিজের সময়ে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে:
এই সময় কি তাকে ছেড়ে দেবে?
নাকি সময় নিজেই তাকে বদলে দেবে চিরতরে?

এপিসোড ২: যুদ্ধের ছায়া —- পরবর্তী পর্বে দেখা যাবে কীভাবে ফারহান ধীরে ধীরে সেই যুগের বাস্তবতার মুখোমুখি হন এবং বুঝতে শুরু করেন এই যুদ্ধ কেবল বাহ্যিক নয়, তার নিজের মধ্যেও একটি যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *